ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শনিবার (১ নভেম্বর) রাতে ঘটে যাওয়া পাল্টাপাল্টি সন্ত্রাসী হামলায় গুলিবিদ্ধ ইয়াছিন (২২) দুইদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে অবশেষে আজ সোমবার (৩ নভেম্বর) ভোরে মারা গেছেন।
নিহত ইয়াছিন নবীনগর পৌর এলাকার আলমনগর গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে। নিহতের ভাই শাহীন মিয়া জানান, ভোররাতেই ইয়াছিনের মৃত্যু হয় এবং তারা মরদেহ নিয়ে নবীনগরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।
এর আগে একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ নূরজাহানপুর গ্রামের কুখ্যাত মনেক ডাকাতের ছেলে শিপন মিয়া (৩০) শনিবার রাতেই মারা যান। এ নিয়ে ওই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত দুইজনের মৃত্যু হলো।
সংঘর্ষের সূত্রপাত
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (১ নভেম্বর) রাত আনুমানিক ৯টার দিকে নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের গণি শাহ মাজারসংলগ্ন একটি হোটেলে শিপন মিয়া আড্ডা দিচ্ছিলেন। এ সময় হঠাৎ একদল সশস্ত্র দুর্বৃত্ত হোটেলে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়।
গুলিতে শিপন মিয়া (৩০), হোটেলকর্মী ইয়াছিন (২০) ও নূর আলম (১৮) গুলিবিদ্ধ হন। গুলির শব্দে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও সন্ত্রাসীরা নির্বিঘ্নে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
প্রতিশোধের হামলা
শিপন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে তার গ্রামের লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে সশস্ত্র অবস্থায় গণি শাহ মাজারসংলগ্ন তালতলায় হামলা চালায়। এ সময় স্থানীয় শিক্ষক এমরান হোসেন মাস্টারের (৩৮) অফিসে গুলি করা হয়।
পরে তারা থোল্লাকান্দি গ্রামে গিয়ে একাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। স্থানীয়রা জানান, এমরান হোসেন মাস্টার নবীনগরের থোল্লাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা এবং ঢাকায় কর্মরত পুলিশ উপকমিশনার (ডিসি) বিল্লাল হোসেনের ছোট ভাই। তিনি পাশের শ্যামগ্রাম মোহিনী কিশোর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।
পুরনো বিরোধের জের
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কুখ্যাত মনেক ডাকাত ও তার ছেলে শিপন দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাদক, চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ নানা অপরাধে জড়িত ছিল। তাদের সঙ্গে থোল্লাকান্দি গ্রামের রিফাত ও তার সহযোগীদের সম্পর্কও ছিল।
সম্প্রতি অবৈধ অর্থ ভাগাভাগি নিয়ে শিপন ও রিফাতের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। সেই বিরোধের জের ধরেই শনিবার রাতে রিফাতের নেতৃত্বে সশস্ত্র হামলাকারীরা গণি শাহ মাজারসংলগ্ন হোটেলে ঢুকে শিপনের ওপর গুলি চালায়।
পুলিশের বক্তব্য
নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনূর ইসলাম বলেন,
“শিপনকে গুলি করে রিফাত, যিনি থোল্লাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা এবং এমরান মাস্টারের আত্মীয়। শিপন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর শুনে মনেক ডাকাতের অনুসারীরা ভুল করে ধরে নেয় যে এমরান ঘটনাটির সঙ্গে জড়িত। সেই ভুল ধারণা থেকেই তারা এমরানের অফিসে হামলা চালিয়ে তাকে গুলিবিদ্ধ করে।”
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) পিয়াস বসাক জানান,
“ঘটনার পর থেকেই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব ও সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে, তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।