নাজিরুল ইসলাম, শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ আসছে শীতের মৌসুমে আগাম শীতকালীন সবজি চাষাবাদে জমি প্রস্তুত, বীজতলা তৈরি, বীজ বপন, চারা উৎপাদন, চারা রোপণ, চারা বিক্রি, মাচা তৈরি সহ হরেক রকমের কৃষি কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন বগুড়ার শাজাহানপুরের কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় খরিপ-১ ও খরিপ-২ মৌসুমে ৮০০ এক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষাবাদ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজির বীজ ও চারা রোপণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৫০ হেক্টর জমিতে মরিচ, ১১০ হেক্টর জমিতে সীম, ১০০ হেক্টর জমিতে বেগুন, ১৪৬ হেক্টর জমিতে করলা, ৮০ হেক্টর জমিতে ফুল কপি চাষাবাদ সহ মোট ৫৮৬ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য সবজিগুলো ১ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে উপজেলার ৩ শতাধিক ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে কলমি শাক, পুঁইশাক, লাউ, চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। আরো জানা গেছে আসছে শীত মৌসুমে এ উপজেলায় বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষাবাদ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সরেজমিনে কথা হয় উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের মানিকদিপা গ্রামের করলা চাষী আব্দুর রশিদ আবুর সাথে। তিনি জানান, আসছে শীত মৌসুমে ১ বিঘা জমিতে আগাম জাতের হাইব্রিড বারোমাসি করলা বীজ বপন করেছি। চারা গজানো প্রায় শেষের দিকে। এখন জমিতে চলছে মাচা তৈরির কাজ শেষ করেছি। সামনে আশ্বিন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে গাছে গাছে ফুল ও ফল আসবে। আবার করলা শেষ হওয়ার আগেই একই মাচায় উচ্চ ফলনশীল জাতের সীমের বীজ বপন করা হয়েছে। করলা বিক্রি শেষ হলে পুরো শীত মৌসুম জুড়ে সীম বিক্রি করা যাবে। এবার বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি তুলনামূলক একটু বেশি। এখন থেকে আবহাওয়া ভালো থাকলে করলার ভালো ফলন পাওয়া যাবে। এবছর অতিবৃষ্টির কারণে সব ধরনের সবজির দামও কিছুটা বেশী। আশা করছি ভালো ফলন হলে এবার বেশ লাভবান হতে পারব।
একই গ্রামের ফুলকপি চাষী আবু তালেব জানান, আসছে শীত মৌসুমের জন্য ভাদ্র মাসের প্রথম সপ্তাহে দেড় বিঘা জমিতে আগাম জাতের ভালো ফলনশীল ফুল কপি চারা রোপণ করেছি। জমির আগাছা পরিষ্কার করে নিয়মিত বালাইনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। চারাগুলো বেশ তরতাজা হয়ে এখন গাছে গাছে ফুল কপি ফুটেছে। ভাদ্র মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ফুল কপি বিক্রি শুরু করেছি। প্রতি কেজি ফুলকপি এখন ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, গত শীতের মৌসুমে আগাম জাতের ফুল কপি চাষ করে ভালো দাম পেয়েছি। এবছরেও ভালো ফলন ও বাজার দর ভালো থাকলে বেশ লাভবান হতে পারব।
উপজেলার খরনা ইউনিয়নের হরিণগাড়ী গ্রামের বেগুন চাষী ঠান্ডু মিয়া বলেন, গত আষাঢ় মাসের শুরুতে ১ বিঘা জমিতে যশোরের বেগুনের চারা রোপণ করেছি। বেগুন গাছ এখনো মোটামুটি ভালো আছে। তবে গত কয়েকদিন আগে তীব্র তাপমাত্রার কারণে কিছু গাছ নষ্ট হয়েছে। তাছাড়া বেগুন চাষে খরচ একটু তুলনামূলক বেশি। বর্তমানে বাজারে বেগুনের দাম ভালো যাচ্ছে। ১ মণ বেগুনের দাম ২৪০০ থেকে ২৮০০ টাকা। বাজারদর স্থিতিশীল থাকলে খরচ বাদে কিছুটা লাভবান হওয়া যাবে।
উপজেলার গোহাইল ইউনিয়নের চেলো গ্রামের মরিচ চাষী বেলাল হোসেন বলেন, গত শ্রাবণ মাসের শেষ সপ্তাহে দেড় বিঘা জমিতে হাইব্রিড টাইগার জাতের মরিচের চারা রোপন করেছি। এর এক সপ্তাহ পরেই আরো ১ বিঘা জমিতে হাইব্রিড পিনিয়াম জাতের মরিচের চারা রোপন করি। চারা রোপণের পর থেকে গাছগুলো তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠতে শুরু করেছে। নিয়মিত জমির আগাছা পরিষ্কার করে বালাইনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। এখন গাছে গাছে ফুল দেখা দিয়েছে। আশা করছি সামনে আশ্বিন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বিক্রি শুরু করতে পারব। বর্তমানে মরিচের দাম খুব চড়া। প্রতিবন মরিচের বর্তমান পাইকারি দাম ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা মন। পুরো মৌসুমে বাজারদর ভালো থাকলে প্রায় ৪ লাখ টাকার মরিচ বিক্রি করতে পারব।
শাজাহানপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমিনা খাতুন দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, উত্তরবঙ্গের মধ্যে শীতকালীন মৌসুমে সবজি চাষাবাদে এ উপজেলা অন্যতম। প্রতিবছর এই উপজেলায় উৎপাদিত সবজি সারাদেশে রপ্তানি করা হয়। এছাড়াও এখানকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজি ও সবজির চারা সারাদেশে পাঠিয়ে থাকেন। অপরদিকে এ উপজেলা বাংলাদেশের মধ্যে চারার নগরী হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। দেশের মানুষের মাঝে বিষ মুক্ত সবজি সরবরাহ করা সহ শীতকালীন সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় সরাসরি কৃষকদের জমিতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।