
ঢাকা, ২৯ জুলাই, ২০২৫:
ফলোআপ চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে যুক্তরাজ্যে নেওয়ার বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। দল, পরিবার বা চিকিৎসকরা কেউই এখনও লন্ডনে যাওয়ার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছু বলেননি। তবে তার চিকিৎসার প্রয়োজনে যেকোনো সময় সেখানে যেতে হতে পারে— এমন সম্ভাবনা মাথায় রেখেই যুক্তরাজ্যের মাল্টিপল ভিসার জন্য নতুন করে আবেদন করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার আগের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুন করে আবেদন করার পাশাপাশি এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতাও চাওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বিএনপির পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার বলেন, “ম্যাডামের যুক্তরাজ্যের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাই মাল্টিপল ভিসার জন্য আবেদন করা হয়েছে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তাও চাওয়া হয়েছে। তবে লন্ডনে ফলোআপ চিকিৎসার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।”
চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনও জানান, “এখনো ফলোআপ চিকিৎসার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত কিংবা আলোচনা হয়নি।”
৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে নানা জটিল অসুস্থতায় ভুগছেন— যার মধ্যে রয়েছে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদরোগ এবং লিভার সিরোসিস। ২০২১ সালের নভেম্বরে তার লিভার সিরোসিস ধরা পড়ার পর বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত সেন্টারে পাঠানোর সুপারিশ করে মেডিকেল বোর্ড। সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি না দেওয়ায় বিষয়টি আলোচনায় আসে।
তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরদিন রাষ্ট্রপতির আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। এরপর প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ৮ জানুয়ারি কাতারের পাঠানো একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনে নেওয়া হয় তাকে। লন্ডন পৌঁছে তিনি ভর্তি হন ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিক’-এ। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকেন ডা. জন প্যাট্রিক কেনেডি ও ডা. জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে।
১৭ দিন হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা শেষে ২৫ জানুয়ারি ছেলে তারেক রহমানের বাসায় যান তিনি। এরপর প্রায় সাড়ে তিন মাস ফলোআপ চিকিৎসা চলতে থাকে। দীর্ঘ চার মাস পর, গত ৬ মে খালেদা জিয়া দেশে ফেরেন।
বর্তমানে গুলশানের ফিরোজা বাসায় বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন তিনি। তবে সম্প্রতি তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হলে ২৩ জুলাই দিবাগত রাতে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাতেই পরীক্ষানিরীক্ষা শেষে আবার বাসায় ফিরিয়ে আনা হয়।
চিকিৎসকদের একাংশ তখন ফলোআপ চিকিৎসার জন্য তাকে আবার লন্ডনে নেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা শুরু করেন। এরপরই খালেদা জিয়ার জন্য যুক্তরাজ্যের মাল্টিপল ভিসার নতুন আবেদন জমা দেওয়া হয়।