
রাজনীতি ডেস্কঃ
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “আমরা এখনো সেই প্রত্যাশিত বাংলাদেশ পাইনি। তবে ময়মনসিংহবাসী যদি আমাদের পাশে থাকেন, ইনশাআল্লাহ, সেই স্বপ্নের দেশ গড়তে পারব।”
সোমবার (২৮ জুলাই) বিকেল পৌনে ৬টায় ময়মনসিংহ টাউন হল মাঠে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শেষে গণজমায়েতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “দেশে সংস্কার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী জুলাই সনদ অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে এবং তা ৫ আগস্টের মধ্যেই। আমরা চাই, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য হোক। নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), এবং পিএসসির মতো সংস্থাগুলোর নিরপেক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে সাংবিধানিক কমিটির মাধ্যমে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা একটি নিরপেক্ষ পুলিশ, নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা চাই। এই প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ছাড়া কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। ইনশাআল্লাহ, ৫ আগস্টের মধ্যেই আমরা জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র আদায় করব। এর আগেই, ৩ আগস্ট ঢাকায় আমরা সমবেত হচ্ছি। আশা করছি, ময়মনসিংহবাসী আমাদের পাশে থাকবে।”
জাতীয় রাজনীতিতে ময়মনসিংহের ভূমিকা তুলে ধরে নাহিদ ইসলাম বলেন, “এই অঞ্চল জমিদারি, উপনিবেশ এবং ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সূতিকাগার। এখানকার মানুষ কৃষক আন্দোলনসহ নানা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে। সেই ঐতিহ্য নিয়েই আমরা লড়াই করছি। চাকরি ও ন্যায্য অধিকারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনই পরিণত হয়েছিল গণঅভ্যুত্থানে। তখন ময়মনসিংহের সাধারণ মানুষ, শ্রমজীবীরা, বিশেষ করে গার্মেন্টসের মা-বোনেরা রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। তারা দেখেছিলেন ছাত্রদের গুলি করা হচ্ছে—সেই প্রতিবাদ করতে গিয়েই জীবন দিয়েছিলেন অনেকে। তাদের আত্মত্যাগেই আমরা আজকের বাংলাদেশ পেয়েছি।”
ময়মনসিংহের উন্নয়ন নিয়ে সমালোচনা করে তিনি বলেন, “বিভাগীয় শহর হওয়া সত্ত্বেও এখানে কাঙ্ক্ষিত অবকাঠামো উন্নয়ন হয়নি। ব্রহ্মপুত্র নদ দখল ও দূষণে ধ্বংসপ্রায়। প্রকৃতি আর পরিবেশকে রক্ষা করেই উন্নয়ন করতে হবে—এবং তা যেন সুষম হয়। আমরা বিশ্বাস করি, ময়মনসিংহবাসী এই লড়াইয়ে আমাদের সঙ্গ দেবে।”
গণজমায়েতে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হাসনাত আব্দুল্লাহ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার। কিন্তু কেউ কেউ আমাদের নাম, এনসিপির ব্যানার ব্যবহার করে সেই অনৈতিক কাজ করছে। এটা বরদাশত করা হবে না। আমাদের কেউ যদি মুখে নতুন বাংলাদেশ গড়ার কথা বলে, আর পেছনে গিয়ে চাঁদাবাজিতে যুক্ত হয়—তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আরেকটি সমস্যা হলো সেলফিবাজ নেতাকর্মী। যারা শুধু মঞ্চে সেলফি তোলে, কিন্তু মাঠে থাকে না। নিজেদের ঘর থেকেই শুদ্ধি অভিযান শুরু করতে হবে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে, তাদের কথা শুনে, সমাধান খুঁজতে হবে। তেলবাজ ও চাঁদাবাজদের দলে জায়গা নেই।”
গণজমায়েতে সভাপতিত্ব করেন এনসিপির ময়মনসিংহ জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী জাবেদ রাসিন। আরও বক্তব্য দেন ডা. তাসনিম জারা, সামান্তা শারমিন, নাহিদ সারোয়ার, আরিফুল ইসলাম আরিফ, শহীদ সাগরের বাবা মো. আসাদুজ্জামান আসাদ, ডা. জাহিদুল ইসলাম, আশিকিন আলম রাজন, আবুল বাশার, তানহা সামান্তা প্রমুখ।
মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পদযাত্রা বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান ইকরাম এলাহী খান, যুগ্ম বাস্তবায়নকারী অ্যাডভোকেট এটিএম মাহাবুবুল আলম, সদস্য আশিকুর রহমান, তারিক হোসেনসহ আরও অনেকে।
এর আগে, শহীদ রিদোয়ান হাসান সাগর চত্বর (ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন) থেকে পদযাত্রা শুরু করে নেতাকর্মীরা টাউন মাঠে এসে গণজমায়েতে যোগ দেন। এতে অংশ নেন শহীদ পরিবারের সদস্য এবং আহত জুলাই যোদ্ধারাও।