Chief TV - Leading online news portal of Bangladesh.

Header
collapse
...
Home / শিক্ষা / জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ উদ্বোধন - সরকারী বিদ্যালয়ে অনীহা বাড়ছেই - Chief

জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ উদ্বোধন - সরকারী বিদ্যালয়ে অনীহা বাড়ছেই - Chief

2025-05-11  সম্পাদক  46 views
জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ উদ্বোধন - সরকারীতে অনীহা বাড়ছে রাজধানীতে - Chief TV

ঢাকায় প্রাথমিক শিক্ষার চিত্র উদ্বেগজনকভাবে পাল্টে গেছে। মহানগরীর প্রায় ৩৪১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংকটে ভুগছে। ঢাকা শহরের প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের মোট ১৬ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ১৩ লাখই পড়ছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এমনকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পর্যন্ত নিজেদের সন্তানকে এই বিদ্যালয়ে ভর্তি করছেন না, যেগুলো অনেকের চোখে এখন ‘গরিবের স্কুল’ হিসেবে পরিচিত।

সরকারি বিদ্যালয়ের এমন দুরবস্থার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে অবকাঠামোগত দুর্বলতা, নিরাপত্তার অভাব, শিক্ষকদের অনীহা এবং বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আধিপত্য। বেশ কিছু সরকারি স্কুলে ছুটির দিনগুলোতে বিয়ের অনুষ্ঠানসহ নানা সামাজিক আয়োজন চলে, যা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের তত্ত্বাবধানে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন সন্তানদের প্রাথমিক শিক্ষার পেছনেই অভিভাবকদের অনেক অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। উচ্চবিত্তের জন্য তা সমস্যা না হলেও মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের জন্য এটি কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে বাধ্য হয়েই কেউ কেউ সরকারি স্কুলে সন্তান পাঠাচ্ছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে শিক্ষার্থী সংকটে থাকা প্রায় ৩০০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে পাশের বিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে।

এই বাস্তবতায় শনিবার (১০ মে) শুরু হয়েছে ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ–২০২৫’। “মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করি, বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ি” স্লোগানকে সামনে রেখে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকাশে আমাদের সক্রিয় হতে হবে। সীমিত সম্পদ ও সময়ের মধ্যে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।”

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, “দেশে বর্তমানে ৩২ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। শিক্ষকদের নামে অহেতুক মামলার কারণে বিদ্যালয় পরিচালনায় বিঘ্ন ঘটছে।” তিনি আরও বলেন, শিক্ষাব্যবস্থার বাণিজ্যিকীকরণে মান কমে যাচ্ছে। অনেকে জিপিএ-৫ পেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় টিকছে না।

তিনি প্রাথমিক পর্যায়ের বই ছাপা ও বিতরণের দায়িত্ব জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে সরিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে দেওয়ার পরামর্শ দেন। তাঁর মতে, এনসিটিবি শুধু পাঠ্যক্রম প্রণয়নের দায়িত্বে থাকুক।

আলোচনা শেষে বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০২৪। শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় নির্বাচিত হয়েছে দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের সুব্রত খাজাঞ্চী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হয়েছেন বগুড়ার গাবতলী উপজেলার পদ্মপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মো. মোস্তফা কামাল এবং শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকা হয়েছেন নীলফামারীর সৈয়দপুরের সাবর্ডিনেট কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিউলি সুলতানা—তিনটি পুরস্কারই উত্তরাঞ্চলের।

‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ’ উপলক্ষে এবার ১৪টি ক্যাটাগরিতে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে এবং শিক্ষার্থীদের ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও বিষয়ভিত্তিক প্রতিযোগিতায় ১৮টি বিভাগে বিজয়ীদের মোট ১৫০টি পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।

ঢাকায় প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার পরিসংখ্যানও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে মোট ৩ লাখ ২২ হাজার ৯০৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৪৫ হাজার ৪১৮ জন (১৪.৬%) পড়ছে সরকারি বিদ্যালয়ে। আর প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১৩ লাখ ৫২ হাজার ৭২৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে সরকারি স্কুলে পড়ছে মাত্র ২ লাখ ৯০ হাজার ৬০৩ জন (২১.৫%)। সব মিলিয়ে সরকারি বিদ্যালয়ে পড়ছে মাত্র ২০.৬ শতাংশ শিক্ষার্থী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন অধ্যাপক জানান, “বিনা মূল্যে শিক্ষা, উপবৃত্তি ও সরকারি বেতনপ্রাপ্ত শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও বাধ্য না হলে রাজধানীর মানুষ সরকারি বিদ্যালয়কে বেছে নেন না।” তিনি বলেন, সরকারি বিদ্যালয়ের পাশেই রয়েছে অসংখ্য বেসরকারি স্কুল ও কিন্ডারগার্টেন, যেগুলো শিক্ষা নয়, ব্যবসার অংশ হয়ে উঠেছে।

প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় এই বৈষম্য ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।


Share: