
নিজের জীবন-সংগ্রাম, উপলব্ধি ও আবেগপ্রবণ মুহূর্ত নিয়ে প্রায়ই সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খুলে থাকেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। সম্প্রতি দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি খোলাসা করেছেন, জীবনের কঠিনতম সময়, বিশ্বাসঘাতকতা আর অপমানই তাঁকে সবচেয়ে বড় শিক্ষা দিয়েছে।
স্ট্যাটাসে নিজের সাবেক স্বামীর কিছু আচরণ নিয়ে তীব্র আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন তিনি।
বাঁধন লিখেছেন—
“আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা এসেছে বই বা পরামর্শ থেকে নয়, বরং এসেছে কষ্ট, বিশ্বাসভঙ্গ ও অপমান সয়ে টিকে থাকার মধ্য দিয়ে। একটি ঘটনা আমাকে এমন এক অভিজ্ঞতা দিয়েছিল, যা আমি চিরকাল মনে রাখব।
মেয়ের অভিভাবকত্ব নিয়ে মামলা চলাকালে আমার প্রাক্তন স্বামী, তার কিছু ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ও এক প্রভাবশালী ফটোসাংবাদিক মিলে আমার বিরুদ্ধে একটি ঘৃণ্য প্রচারণা চালায়। উদ্দেশ্য ছিল আমাকে ‘অযোগ্য মা’ এবং ‘অশালীন নারী’ হিসেবে সমাজের সামনে তুলে ধরা।
সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয় মিথ্যা গল্প। আমার ছবি ছাপানো হয় অপমানজনক শিরোনামে। আমি যাদের আপন ভাবতাম, তারা অনেকেই তখন নিশ্চুপ। পাশে ছিল মাত্র হাতে গোনা কিছু বিনোদন সাংবাদিক বন্ধু ও অচেনা কিছু সহানুভূতিশীল মানুষ।
তবে প্রকাশ্যে অপমানই ছিল না সবচেয়ে কষ্টের। সবচেয়ে ব্যথা দিয়েছিল বিশ্বাসঘাতকতা।
সে শুধু প্রাক্তন স্বামী ছিল না—আমার সন্তানের বাবা। তবুও সে আমার মানসিক ধ্বংস কামনা করেছিল। আমি হয়তো তাকে ভালোবাসতাম না, কিন্তু তাকে বিশ্বাস করেছিলাম। আর সেই বিশ্বাসটাকেই সে নির্মমভাবে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল।
পরদিন এক বন্ধুর বাসায় গিয়ে ভেঙে পড়েছিলাম। কান্নায় দম নিতে পারছিলাম না। মানসিকভাবে এতটাই বিপর্যস্ত ছিলাম যে বুঝতেই পারছিলাম না কী করা উচিত, কারণ আমার প্রতিটি পদক্ষেপ মামলার রায়কে প্রভাবিত করতে পারত।
ঠিক সেই সময় আমার বন্ধুর স্বামী আমাকে একটা কথা বলেন, যা আমার চিন্তাধারাই বদলে দেয়। তিনি বলেছিলেন,
‘তোমার সামনে দুটি পথ—
এক. তুমি প্রতিশোধে উন্মত্ত হয়ে তার মতোই হয়ে যাও।
দুই. তুমি কঠিন কিন্তু সম্মানজনক পথ বেছে নাও—নীরবতা, সত্য আর আত্মমর্যাদার পথ।
প্রথম পথ হয়তো তাৎক্ষণিক স্বস্তি দেবে, কিন্তু ধীরে ধীরে তুমিই তাতে ক্ষয়ে যাবে।
দ্বিতীয় পথ যদি আঁকড়ে ধরতে পারো, সেটাই তোমায় সারিয়ে তুলবে। মুক্তি দেবে।’
আমি দ্বিতীয় পথটাই বেছে নিয়েছিলাম। সহজ ছিল না, কিন্তু এই সিদ্ধান্তই আমাকে ভেতর থেকে শক্ত করেছিল।
এরপর থেকে কেউ আমাকে অপমান বা আঘাত করার চেষ্টা করলে আমি প্রতিক্রিয়া দিই না। কারণ আমি জানি—আমার নীরবতা, আমার সংযম, তাদের সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয়।
যখন তারা এখনো নিজেদের রাগ, ক্ষোভ আর ঘৃণায় জর্জরিত, আমি তখন এগিয়ে গেছি অনেক দূর—শান্তি, উপলব্ধি আর সম্মানের পথে।”